
কিশোরগঞ্জে সুদানে নিহত সেনাসদস্য জাহাংগীরের গ্রামের বাড়ী পাকুন্দিয়ায় চলছে শোকের মাতম।
দক্ষিণ সুদানের আবেই শহরে ইউএন ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের আক্রমণে নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শান্তিরক্ষী মো. জাহাঙ্গীর আলমের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ।
নিহত জাহাঙ্গীর আলম (৩০) উপজেলার জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামের কৃষক হজরত আলীর ছেলে। তার স্ত্রী ও তিন বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে।গতকাল শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, সুদানের আবেই শহরে জাতিসংঘের ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের আক্রমণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আটজন।
এর মধ্যে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাহাঙ্গীর আলমও রয়েছেন।
তিনি সেনাবাহিনীর মেস ওয়েটার ছিলেন।সরেজমিনে রবিবার জাহাঙ্গীর আলমের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে স্বজনদের আহাজারি চলছে। পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয় লোকজন বাড়িতে ভিড় করছে। কেউ কেউ শোকগ্রস্তদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন।বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে দেখা যায়, ছোট একটি টিনের ঘরে নিহত জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী রুবাইয়া আক্তার আহাজারি করছেন। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য ঘরভর্তি মানুষ। বাড়ির উঠানে বসে বাবা হজরত আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন জাহাঙ্গীর আলম। অভাবের সংসারে ভাগ্য বদলের আশায় চলতি বছরের ৭ নভেম্বর তিনি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেন।মিশনে যাওয়ার মাত্র এক মাস সাত দিনের মাথায় তার মৃত্যুর খবর আসে পরিবারে।
নিহত জাহাঙ্গীরের বাবা হজরত আলী জানান, তার তিন সন্তানের মধ্যে জাহাঙ্গীর দ্বিতীয়। শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে সৌদি আরব থেকে তার বড় ভাইয়ের কাছে মুঠোফোনে জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর খবর পান। রবিবার সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রংপুর ক্যন্টনম্যান্ট থেকে ক্যাপ্টেন ইমরান নামে একজন কর্মকর্তা মুঠোফোনে ছেলের মৃত্যুর সংবাদটি নিশ্চিত করেছেন বলে জানান তিনি।
নিহতের শ্যালক মো. ওয়ালী উল্লাহ জানান, তার ভগ্নিপতির অকাল মৃত্যুতে তাদের পরিবারের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। মাত্র পাচ বছরের সংসার জীবনে তাদের তিন বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। তার বোনের আহাজারিতে তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষাই তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। ভগ্নিপতির লাশ দ্রুত দেশে ফেরত আনতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি। অভাবগ্রস্ত পরিবারটিকে প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
মন্তব্য করুন