রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে চলাচলকারি লঞ্চগুলো বহু বছরের পুরনো। প্রায় অকেজো হয়েপড়া অনেক লঞ্চের উপরে চকচকে বাহারি রঙের প্রলেপ থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ ইঞ্জিনসহ ভিতরের অনেক কিছইু জোড়াতালি দেওয়া। প্রশিক্ষিত মাষ্টার না নিয়ে অল্প বেতনে অনভিজ্ঞ ‘হেলপার’ দিয়ে লঞ্চ চালাছেন সংশ্লিষ্ট লঞ্চমালিকদের অনেকে। পাশাপাশি যাত্রীনিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই অধিকাংশ লঞ্চে। এর মধ্যে ‘এমভি ফাতেহা নূর’ এবং ‘এমভি নজীর’ নামের লঞ্চ দুটির আবাসপত্র সবচেয়ে বেশি খারাপ। অনেকটা ভাঙাচোরা বডি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের (বিআইডাবিব্লউটিএ) নাকের ডগায় ওই লঞ্চদুটি মারাত্মক ঝুঁকির মুখে অবাধে যাত্রীপারাপার করছে।
দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। প্রতিদিন সেখানে নারী, শিশুসহ হাজারো যাত্রী লঞ্চপারাপার হয়। বর্তমান বহরে ২৮টি এমভি (বড়) ও ৫টি এমএল (ছোট) মিলে মোট ৩৩টি লঞ্চ রয়েছে। এর মধ্যে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ১৬টি লঞ্চ চলাচল করছে। অপর ১৭টি লঞ্চ চলছে মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাবনার কাজীরহাট নৌরুটে। চলাচলকারি ওই লঞ্চগুলোর অধিকাংশই চল্লিশ থেকে পয়তাল্লিশ বছরের পুরনো। প্রায় অকেজো হয়েপড়া অনেক লঞ্চের উপরে চকচকে বাহারি রঙের প্রলেপ থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ ইঞ্জিনসহ ভিতরের অনেক কিছইু জোড়াতালি দেওয়া। সেখানে প্রশিক্ষিত কোন মাষ্টার (চালক) না নিয়ে অনেক লঞ্চমালিক সামান্য বেতনে অনভিজ্ঞ ‘হেলপার’ দিয়ে তাদের লঞ্চগুলো চালাচ্ছেন। পাশাপাশি প্রতিটি লঞ্চে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, ফায়ার বাকেট, বালুভরা বাক্স, পাম্প মেশিন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক লাইফ বয়া, ফাস্টএইডসহ জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন সরঞ্জাম থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ লঞ্চে তা নেই। এর মধ্যে ‘এমভি ফাতেহা নূর’ ও ‘এমভি নজীর’ নামের দুটি লঞ্চের আবাসপত্র সবচেয়ে বেশি খারাপ। ভাঙাচোরা বডি নিয়েই ওই লঞ্চদুটি অবাধে চলাচল করছে। এদিকে নৌদুর্ঘটনা এড়াতে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিআইডাবিব্লউটিএ’র। এ জন্য দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া উভয় ঘাটে বিআইডাব্লউটিএর দুজন ট্রাফিক পরিদর্শক রয়েছেন। তারা লঞ্চ টার্মিনালে সার্বক্ষণিক উপস্থিত থেকে যথাযথ ভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করার কথা। অথচ ট্রাফিক পরিদর্শকের উপ পরিচালকরাই লঞ্চমালিক ও সংশ্লিষ্ট লোকজন তাদের নিজ নিজ লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে লঞ্চ চালাচ্ছেন । দৌলতদিয়া ঘাটে কর্মরত বিআইডাব্লউটিএ-এর ট্রাফিক পরিদর্শক মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও আরিচা-কাজীরহাট নৌরুটে চলাচলকারি লঞ্চগুলোর মধ্যে এমভি ফাতেহা নূর এবং এমভি নজীর নামের লঞ্চ দুটির অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট লঞ্চের লোকদেরকে অকেবার বলেছি। কিন্ত তারা কোন কথাই শুনছেন না।’
এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রীপারাপার প্রসঙ্গে এমভি ফাতেহা নূর লঞ্চের মালিক আব্দুল হালিম বলেন, ‘আমার লঞ্চের বডিতে সমস্যা রয়েছে-এ কথা সত্য। এখন বাজার (লঞ্চের ব্যবসা) খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। এ কারণে কাজ করাতে দেরি হয়েছে । তবে, চলতি (ডিসেম্বর) মাসের মধ্যে আমি আমার লঞ্চের মোরামত কাজ করাবো।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাবিব্লউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারি পরিচালক (আরিচা অঞ্চল) বোরহান উদ্দিন প্রতিদিনের সংবাদ কে বলেন,ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়া নৌপথে লঞ্চ চলাচলের কোন সুযোগ নেই। তবে ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চ চলাচলের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমি খতিয়ে দেখবো। সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্ট লঞ্চ মালিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থাতা গ্রহণ করা হবে।
আমিনুল ইসলাম রানা
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি।
মোবাইল : ০১৯৩৩১৩৬২৩৩।
তারিখ : ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫।