জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ভয়ভীতি ও হুমকি নিষিদ্ধ আ.লীগের ষড়যন্ত্র ঠেকাতে প্রস্তুত সরকার-যুগের সংবাদ - jugershanbad
যুগের সংবাদ ডেস্ক,
৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫:০৫ অপরাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ভয়ভীতি ও হুমকি নিষিদ্ধ আ.লীগের ষড়যন্ত্র ঠেকাতে প্রস্তুত সরকার-যুগের সংবাদ

দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হচ্ছে ১১ ডিসেম্বর। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অপতৎপরতা ও ষড়যন্ত্র। দলটি দেশের মানুষের কাছে এখন আতঙ্কের নাম। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সাড়ে ১৫ বছর দেশের মানুষের ওপর চেপে বসেছিল। ক্ষমতা ধরে রাখতে গুম-খুনসহ সব ধরনের অবিচারের পথ বেছে নেয় দলটি। মানুষের ভোটাধিকার থেকে করা হয় বঞ্চিত। ভিন্নমতের কেউ প্রতিবাদও করতে পারত না। কিন্তু গেল বছর অদম্য ছাত্র-জনতার লাগাতার আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত পতন ঘটে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের। এরপর থেকে তিনি এবং তার দলের শীর্ষ নেতারা ভারতে পলাতক। এমন বাস্তবতায় দেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে পলাতক ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বহুল প্রত্যাশিত জনগণের এই নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষিদ্ধ দলটির নেতাকর্মীরা নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণাও দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সম্প্রতি রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে তাদের সমর্থকরা ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ‘বন্ধ’ করে দেবে। তাদের আন্দোলন সহিংস রূপ নিতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচন বানচালে চোরাগোপ্তা হামলা ও আগুন সন্ত্রাসের চেষ্টা চালাতে পারে পতিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এছাড়া সাইবার জগতে গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা চালাতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থার অনুন্ধানে বেশকিছু ঝুঁকিপূর্ণ নির্বাচনি আসনও চিহ্নিত হয়েছে। ওই সব আসনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সার্বিক বিষয় মাথায় রেখে নির্বাচন বানচালে আওয়ামী লীগের যে কোনো অপতৎপরতা প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। নির্বাচন সামনে রেখে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭ লাখ ৬৮ হাজার সদস্য। নির্বাচন ঘিরে মাঠে থাকবে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঝুঁকিপূর্ণ আসনগুলোতে থাকবে বেশি নজর। অপতৎপরতায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে মাঠে নেমেছেন গোয়েন্দারা। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারীদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার মাঠ পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আইজিপি বাহারুল আলম নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া ৬৪ জেলার এসপি ও দেশের প্রায় সবকটি থানার ওসিদের রদবদলের মাধ্যমে ঢেলে সাজানো হচ্ছে পুলিশ বাহিনীকে।

আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র মোকাবিলার প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের (মহাপরিদর্শক) আইজি বাহারুল আলম যুগান্তরকে বলেন, ‘দেশের মানুষই তাদের প্রতিহত করবে। তাদের আমরা পরোয়া করি না।’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা কোনো ধরনের নাশকতা চালাতে যেন না পারে সে বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশের সব ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি নির্বাচনের আগে বেহাত হওয়া সব অস্ত্র উদ্ধার এবং সামাজিক মাধ্যমে বিদ্বেষমূলক অপপ্রচার প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। অপপ্রচার রোধে কাউন্টার ন্যারেটিভ প্রস্তুত করে প্রতিটি বিভাগ বা সংস্থার নিজস্ব মুখপাত্রের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা দেশবাসীকে জানানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ভুয়া খবর ছড়িয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করা, পুরোনো ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোসহ সাইবার হুমকি মোকাবিলায় ফরেনসিক দল কাজ করবে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও প্রকাশ্যে হত্যা বন্ধ না হলে পলাতক আওয়ামী লীগ সুবিধা নিতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনি প্রচারণার শুরুতেই চট্টগ্রামে গুলিতে একজন নিহত ও প্রার্থী আহত হয়েছেন। এগুলো যদি নিয়ন্ত্রণ করা না হয় এবং অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বাড়তেই থাকে-তখন পরাজিত ফ্যাসিস্ট এখান থেকে নানা ভাবে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করবে। ফলে সাধারণ ভোটার নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবে কিনা সেটি বড় প্রশ্ন। তাই এই ঝুঁকিমুক্ত ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিক্ষেত্রে আইনের কঠিন ও দৃষ্টান্তমূলক প্রয়োগ ঘটাতে পারলেই একটা স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ভোট হবে বলে আশা করা যায়।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি ইসির উদ্যোগে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক এক সভায় দেশের সব বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নিয়ে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতের সব ধরনের উদ্যোগের কথা জানান।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালে দেশে চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চালাতে পারে তুলে ধরে এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিতে সরকারকে সুপারিশ করে।

প্রশিক্ষণ নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭ লাখ ৬৮ হাজার সদস্য : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। নির্বাচন প্রস্তুতির অংশ হিসাবে মোট ৭ লাখ ৬৮ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য-পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং আনসার ও ভিডিপি সদস্য নিরপেক্ষ ও দক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে বিশেষ নির্বাচনসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এর মধ্যে এক লাখ ৫০ হাজার পুলিশ সদস্যকে আইন ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে পুলিশ সদর দপ্তরের মানবসম্পদ বিভাগ প্রণীত নয়টি প্রশিক্ষণ মডিউলের আওতায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া দেশের ৪৫ হাজার ভোটকেন্দ্রে নিয়োগের লক্ষ্যে পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার আনসার ও ভিডিপি সদস্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। যার মধ্যে এক লাখ ৩৫ হাজার সশস্ত্র এবং চার লাখ ৫০ হাজার নিরস্ত্র সদস্য রয়েছেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে গড়ে ১৩ জন নিরাপত্তা সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যদিকে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৩৩ হাজার সদস্য (১ হাজার ১০০ প্লাটুন) নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ২০২৬ সালের ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সব প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সংসদ নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৮০ হাজার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসাবে মাঠে থাকবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নির্বাচনকালীন সমন্বয়ের জন্য পুলিশ সদর দপ্তর এবং প্রতিটি জেলায় নির্বাচন কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হবে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সিসিটিভি ক্যামেরা ও বডিওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে।

মাঠে থাকবে ৯ দিনের বিশেষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ৯ দিনের জন্য বিশেষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী মাঠে নামবে। এর মধ্যে নির্বাচনের আগে পাঁচ দিন, নির্বাচনের ১ দিন এবং নির্বাচনের পরে ৩ দিন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। তবে দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী এই সময়সীমা সমন্বয় করা হতে পারে।

২৮ হাজার ৬৬৩টি ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮ হাজার ৬৬৩টি ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। এর মধ্যে ৮ হাজার ২২৬টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে। যার সংখ্যা ২ হাজার ৬৭৫টি। অতি ঝুঁকিপূর্ণ এসব কেন্দ্রে অতিরিক্ত তিনজন পুলিশ সদস্য, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে দুজন সদস্য ও সাধারণ কেন্দ্রে একজন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করার প্রাথমিক পরিকল্পনা হয়েছে। এর পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের কাছে অস্ত্র এবং ‘বডিওর্ন ক্যামেরা’ (ভিডিও ক্যামেরা, যা পোশাক বা ইউনিফর্মে যুক্ত করে রাখা যায়) থাকবে। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে ১৩ জন করে আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবেন। এর বাইরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরাসহ বিভিন্ন বাহিনী নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে।

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভোটের আগে-পরে পাঁচদিন মাঠে থাকবেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট

ইয়াছিন বিএনপির মনোনয়ন পেলে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবো: সাক্কু

বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে যা বলল রাশিয়া

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ভিসা কার্যক্রম স্থগিত

পটুয়াখালী-৩ বিএনপির সঙ্গে নুর, যে কোনো মূল্যে নির্বাচন করবেন মামুন

তারেক রহমান ভোটার হবেন ২৭ ডিসেম্বর

যেখানে ভয় ও বাধা থাকবে না,এমন নির্বাচন চাই: প্রধান উপদেষ্টা

কিশোরগঞ্জে ওয়াক্ফ সম্পত্তি আত্মসাৎ ও মিথ্যা মামলার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন

গোয়ালন্দে বালাইনাশক প্রয়োগে পেঁয়াজ চাষীর করে ৭ বিঘা জমিতে

কিশোরগঞ্জে জাতিসংঘ মিশনে নিহত পাকুন্দিয়ার সেনা সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের দাফন সম্পন্ন

১০

মিরপুর স্বাধীন হয় ১৯৭২ সালের ৩১শে জানুয়ারি

১১

বিদ্রোহী কবির পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত শহীদ ওসমান হাদি

১২

ওসমান হাদির মৃত্যুতে বিনোদন জগতের তারকাদের শোক ও সম্মান

১৩

জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ হলেন নাবিলা

১৪

২০০ টাকায় দেখুন বিপিএলের দুই ম্যাচ

১৫

ওসমান হাদির শহিদী বিদায়ে সরব ক্রিকেটাররা

১৬

জরুরি সভা ডেকেছে ছাত্রদল

১৭

বিএনপির ফাঁকা আসনে আলোচনায় জোটের যেসব নেতা

১৮

সংসদ নির্বাচনের তফশিল সংশোধন

১৯

তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বসবেন সিইসি

২০
Developed by : BDIX ROOT