
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পেঁয়াজের আবাদ করেছিলাম। বিঘাপ্রতি প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। শেষ সময় এসে কীটনাশক ডিলারের পরামর্শে পেঁয়াজ ক্ষেতে আগাছা দমনের ওষুধ ছিটিয়ে আমি সর্বশান্ত হয়ে গেছে। সমস্ত পেঁয়াজ পচে গেছে। এখন আমি কিভাবে ঋণ শোধ করবো, আর কিভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকব।’ এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন গোয়ালন্দ উপজেলা উজানচর ইউনিয়নের চরমহিদাপুর গ্রামের মো. ছিদ্দিক মোল্লা।
তিনি আরো বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় আমার ক্ষেতে পেঁয়াজ গাছগুলো খুবই তরতাজা হয়ে উঠেছিল। গাছগুলোর গোড়ায় পেঁয়াজ গুলোও বেশ বড় হয়ে উঠেছিল। এরই মাঝে খেয়াল করলাম পেঁয়াজ গাছের নিচ দিয়ে ছোট ছোট আগাছা উকি দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কীটনাশক ডিলার মো. আব্দুল হকের সাথে আলাপ করলাম। তিনি আমাকে দু’ধরনের ওষুধ দিয়ে পেঁয়াজ ক্ষেতে স্প্রে করে দিতে বললেন।’ ওষুধের অপরিচিত বোতল দেখে আমি তাকে বললাম, আগাছার জন্য এর আগে তো এ ধরনের ওষুধ স্প্রে করিনি। আগে যেটা করেছিলাম সেটা দেন।’ তখন তিনি আমাকে আশ^স্থ করে বললেন, ‘এই ওষুধ আগেরটার মত একই কাজ করে, নিশ্চিন্তে নিয়ে যান, কোন সমস্যা হবে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘তার কথা বিশ^াস করে ওই ওষুধ পেঁয়াজ ক্ষেতে স্প্রে করার দুইদিন পরই পেঁয়াজে পচন ধরে এবং পেঁয়াজ গুলো মাটির নিচ থেকে উপরে উঠে আসে। সেই সাথে পেঁয়াজ গাছ গুলোও মরা মরা হয়ে যায়।’ তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘হক সাহেব আমাকে ভুল ওষুধ অথবা ভেজাল ওষুধ দিয়ে আমাকে সর্বশান্ত করে ফেলেছেন।’
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভালো ফলনের আশায় বালাইনাশক প্রয়োগ করায় হিষ্টুপুষ্টু পেয়াজ পচন ধরেছে এবং গাছের গোড়া থেকে এক’দু ইঞ্চি উপরে উঠে গাছের সাথে ঝুলছে। পেঁয়াজ গাছগুলো তখনো লকলকে রয়েছে। আবার কোথাও কোথাও নুয়ে পড়েছে। এ ধরনের বিরল রোগ আগে কেউ কোনদিন দেখেননি বলে উপস্থিত অনেক কৃষক জানান।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল গফুর শেখ এসময় বলেন, ‘বেচারা অনেক পরিশ্রম ও টাকা খরচ করে ৬/৭ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছিল। পেঁয়াজের চেহারাও খুবই ভালো ছিল। কি ওষুধ দিলো, যে দুই দিনের মধ্যে সব পেয়াজ পচে গেলা। এই পেঁয়াজ বিক্রি তো দুরের কথা নিজেরাও খাওয়া যাবে না। যখন তার পেয়াজ মাঠ থেকে তুলে বিক্রি করা কথা, তখন তিনি লাখ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়ে সর্বশান্ত হয়ে গেছেন।
অপর কৃষক মো. শমশের আলী জানান, এক বিঘা জমিতে পেয়াজ আবাদ করতে এক লাখ টাকা উপরে খরচ হয়। তারা হতদরিদ্র কৃষক। বিভিন্ন ভাবে ঋণ ও ধার-দেন করে তারা পেঁয়াজ চাষ করে থাকেন। তারা লেখা-পড়া না জানায় সাধারনত কীটনাশক ডিলারের পরামর্শে বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে ওষুধ প্রয়োগ করে থাকেন। আর তারা যদি এভাবে নি¤œ মানের ও ভুল বালাইনাশক ধরিয়ে দেয়, তাহলে তাদের আর কোথাও যাওয়ার থাকে না। তিনি আরো জানান, আব্দুল হক এর আগেও আবল-তাবল ওষুধ বিক্রি করে জরিমানা দিয়েছেন।
অভিযুক্ত বালাইনাশকের ডিলার মো. আব্দুল হক বলেন, ‘আমাকে হেনস্তা করার জন্য ওই কৃষক এ ধরনের অভিযোগ করছেন। জমিতে গ্যাস, অতিরিক্ত সার, কীটনাশন ব্যবহারের কারণে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া ওই কৃষক আরো বিভিন্ন জায়গা থেকে ওষুধ নেয়, কি ওষুধে তার ক্ষতি হয়েছে তার ঠিক নেই, আমাকে দোষারোপ করছে। আমার কাছ থেকে আরো অনেকেই বালাইনাশক নিয় ব্যবহার করে থাকে, তারা এ ধরনের কোন অভিযোগ করেনি।’ তার ইতিপূর্বে জরিমানা দেয়ার বিষয়ে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, তখনো আমার কোন দোষ ছিল না, শালিস-বিচারে বসলে গণ্য-মান্য ব্যাক্তিদের কথা রাখতে হয়, তাই জরিমানা দিয়েছিলাম।
এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি অফিসার সৈয়দ রায়হানুল হায়দার জানান, ছবি দেখে যতটুকু বুঝতে পারছি, তাতে হরমন জাতীয় সমস্যার কারণে পেয়াজের এ সমস্যা হতে পারে।
ডিলারের কোন ভুল বা অবহেলা থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
মন্তব্য করুন