মিরপুর স্বাধীন হয় ১৯৭২ সালের ৩১শে জানুয়ারি - jugershanbad
সংগৃহিত,,,Roar Media
২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭:৩২ পূর্বাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

মিরপুর স্বাধীন হয় ১৯৭২ সালের ৩১শে জানুয়ারি

স্বাধীন দেশের বয়স তখন ৪৫ দিন। কিন্তু মিরপুর তখনও হয়ে আছে ঢাকার বুকে এক টুকরো পাকিস্তান।
স্বাধীনতার আগে থেকেই মিরপুরে প্রচুর বিহারী বাস করতো। ১৬ ডিসেম্বরের পর দলছুট পাক সেনারা সাদা পোশাকে এসে আশ্রয় নেয় এই এলাকায়। সাথে আগে থেকেই অবস্থান করা রাজাকাররাও ছিল। পাক সেনা, রাজাকার এবং বিহারীদের নিয়ে এই এলাকা রাষ্ট্রের ভেতর আরেক রাষ্ট্র হয়ে দাঁড়ায়।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী প্রায় ২০ হাজার বিহারীকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে ‘সিভিল আর্মড ফোর্সেস’ (সিএএফ) নামের একটি বাহিনী গঠন করে। তাদেরও বড় অংশ ছিল মিরপুরে।
প্রচুর অস্ত্র থাকায় মিরপুর পরিণত হয় এক মিনি ক্যান্টনমেন্ট-এ। জেনেভা কনভেনশনের তোয়াক্কা না করে প্রতিদিনই সুযোগ পেলেই চালাতো বাঙালি হত্যা।
মিরপুরের সাথে বাইরের জগত ছিল প্রায় বিচ্ছিন্ন, ফলে গোয়েন্দা তথ্য আসে না বললেই চলে। যেকোনো যুদ্ধ শুরু করার আগে শত্রুর ভেতরকার খবর যেন এক এক টুকরো স্বর্ণ! দীর্ঘদিন ধরে মিরপুরে বাস করা বিহারিদের মিরপুরের জলাঞ্চল, জঙ্গল সবই নখদর্পণে। সবমিলে মিরপুর যেন এক দুর্ভেদ্য ঘাঁটি।
মিরপুর ১২, কালাপানি, মিরপুর সিরামিক্স, বর্তমান মিরপুর সেনানিবাস ছিল পাক-বিহারিদের মূল ঘাঁটি। ক্যাপ্টেন হেলাল মোর্শেদের নেতৃত্বে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের তিন প্লাটুন সেনা মিরপুর মুক্ত করার জন্য আগ্রসর হয়।
মিরপুর মুক্ত করার জন্য যে ধরনের অভিযানের প্রয়োজন ছিল সেটাকে বলা হয় door to door fight। এ ধরনের অভিযানে শত্রু শহরের প্রত্যেকটা বাড়িতে অবস্থান করতে পারে। আক্রমণকারী বাহিনীকে পায়ে হেঁটে এবং ভারী কোনো সামরিক যান ছাড়াই প্রত্যেকটা বাড়িতে close quarters combat এর সম্মুখীন হতে হয়।
মিরপুর ১২ নম্বর দিয়ে আগ্রসর হচ্ছিল একটা দল। নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন লেফটেন্যান্ট সেলিম মোহাম্মদ কামরুল হাসান। ৩০শে জানুয়ারি সাড়ে এগারোটা নাগাদ হঠাৎই অ্যামবুশের ফাঁদে পড়েন তারা। আহত শরীর নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যান লেফটেন্যান্ট সেলিম। কভার ফায়ার দিয়ে অন্যদের নিরাপদ অবস্থানে যাবার সুযোগ করে দেন। কিন্তু নিজে আর নিরাপদ অবস্থানে আসতে পারেননি। আহত অবস্থায় বিহারীদের হাতে আটক হন তিনি। পরে বিহারীরা পৈশাচিক নির্যাতন করে হত্যা করে এই দুর্দান্ত অফিসারকে।
ধারণা করা হয় সেদিন বিহারীদের অ্যামবুশে ৪২ জন শহীদ হয়েছিলেন। ডি ব্লকে প্রবেশের সাথে সাথেই আশেপাশের সব বাড়ি থেকে হামলা শুরু করেছিল বিহারীরা। মিরপুর সাড়ে এগারোতে অবস্থান নেওয়া হাবিলদার বারকীর প্লাটুনেও হামলা হয়। সফলভাবে প্রতিহত করেন তারা। মিরপুর ১২ নম্বরের অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ির দিকে অগ্রসর হবার চেষ্টা করে বিহারী বাহিনী। তুমুল যুদ্ধ হয় সেখানেও।
বিকেলে ভারী অস্ত্র দিয়ে মিরপুরের সব বিহারী অবস্থানে হামলা শুরু করে সেনাবাহিনী। ১২ নম্বর লক্ষ্য করে ৮১ মিলিমিটার মর্টার চার্জ করা হয়। অনুমান করা হয় প্রখ্যাত লেখক এবং নাট্যকার জহির রায়হানও এখানেই শহীদ হয়েছিল। তিনি তার নিখোঁজ ভাইকে খুঁজতে সেনাবাহিনীর সাথে মিরপুরের এসেছিলেন।
পরদিন সকালে থেকে পিছু হটা শুরু করে বিহারীরা। রাতের অন্ধকারের নিহত সেনাদের মৃতদেহ গুম করে ফেলা হয়। সেদিন প্রায় ৫০ জন নিহত হলেও মাত্র ৩-৪টি মৃতদেহ পাওয়া যায় পরে। মিরপুর ৩১শে জানুয়ারি মুক্তহলেও পবর্তী ১০দিন সেনাবাহিনীর তল্লাশি অভিযান চলে।
 ছবিটি শহীদ লেফটেন্যান্ট সেলিম মোহাম্মদ কামরুল হাসান এর।
লেখা ও ছবি সূত্রঃ Roar Media
Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভোটের আগে-পরে পাঁচদিন মাঠে থাকবেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট

ইয়াছিন বিএনপির মনোনয়ন পেলে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবো: সাক্কু

বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে যা বলল রাশিয়া

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ভিসা কার্যক্রম স্থগিত

পটুয়াখালী-৩ বিএনপির সঙ্গে নুর, যে কোনো মূল্যে নির্বাচন করবেন মামুন

তারেক রহমান ভোটার হবেন ২৭ ডিসেম্বর

যেখানে ভয় ও বাধা থাকবে না,এমন নির্বাচন চাই: প্রধান উপদেষ্টা

কিশোরগঞ্জে ওয়াক্ফ সম্পত্তি আত্মসাৎ ও মিথ্যা মামলার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন

গোয়ালন্দে বালাইনাশক প্রয়োগে পেঁয়াজ চাষীর করে ৭ বিঘা জমিতে

কিশোরগঞ্জে জাতিসংঘ মিশনে নিহত পাকুন্দিয়ার সেনা সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের দাফন সম্পন্ন

১০

মিরপুর স্বাধীন হয় ১৯৭২ সালের ৩১শে জানুয়ারি

১১

বিদ্রোহী কবির পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত শহীদ ওসমান হাদি

১২

ওসমান হাদির মৃত্যুতে বিনোদন জগতের তারকাদের শোক ও সম্মান

১৩

জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ হলেন নাবিলা

১৪

২০০ টাকায় দেখুন বিপিএলের দুই ম্যাচ

১৫

ওসমান হাদির শহিদী বিদায়ে সরব ক্রিকেটাররা

১৬

জরুরি সভা ডেকেছে ছাত্রদল

১৭

বিএনপির ফাঁকা আসনে আলোচনায় জোটের যেসব নেতা

১৮

সংসদ নির্বাচনের তফশিল সংশোধন

১৯

তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বসবেন সিইসি

২০
Developed by : BDIX ROOT